ঢাকা, ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
good-food
৭৬০

সুগন্ধির সংস্কৃতি-ইতিহাস 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:০২ ১৬ জানুয়ারি ২০২১  

ঘ্রাণ মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি। মানুষ ৫ থেকে ১০ হাজার ঘ্রাণ পৃথক করতে পারে। স্মৃতি ও আবেগ তৈরি হওয়ার যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, তার সঙ্গে ঘ্রাণের সরাসরি সম্পর্ক আছে। কোনো নির্দিষ্ট ঘ্রাণ কোনো বিশেষ স্মৃতিকে তাজা করে তুলতে পারে। মানুষ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার স্মৃতির ভাণ্ডার সম্প্রসারিত হতে থাকে। একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সঙ্গে নানা ধরনের ঘ্রাণ যুক্ত হতে থাকে। সুগন্ধির সৌন্দর্য হচ্ছে স্মৃতির সঙ্গে এর নিবিড় সম্পর্ক। 

 

সুবাস ও মানুষের মনস্তত্ত্বের যে সম্পর্ক, সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে অধ্যয়ন করার বিদ্যার নাম ‘অ্যারোমাকোলজি’। নিউইয়র্কে অলফ্যাক্টরি রিসার্চ ফান্ড এক গবেষণায় দেখেছে এমআরআই স্ক্যানে যাওয়া রোগীর মানসিক চাপ ৬৩ শতাংশ কমে, যদি বাতাসে ভ্যানিলার সুবাস ছড়িয়ে দেয়া হয়।

 

সুগন্ধির ইংরেজি শব্দ পারফিউমের উদ্ভব ল্যাটিন ‘পার ফুমাম’ থেকে। এ লাতিন শব্দ ব্যবহৃত হতো ধোঁয়া থেকে উত্পন্ন সুবাসকে বোঝাতে। প্রাথমিককালে মূলত সুগন্ধি গুল্ম পুড়িয়ে পারফিউম উৎপাদিত হতো। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ব্যাপকভাবে প্রসাধনী ব্যবহার করেছে। কখনো এ ব্যবহার ছিল দৈনন্দিন আবার কখনো বিশেষ, যেমন ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা মৃতদের সমাধিস্থ করার আয়োজনে।

 

প্রসাধনীর মধ্যে সুগন্ধি ছিল বেশ জনপ্রিয়। সুগন্ধির প্রথম ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায় মেসোপটেমিয়ায়। এরপর মিসর হয়ে সুগন্ধীর বিকাশ ঘটে গ্রিসে এবং বাকি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। সুগন্ধি তত্কালীন সভ্যতায় রীতি-প্রথা, সৌন্দর্য এবং বাণিজ্যের একটি জনপ্রিয় উপাদান হয়ে ওঠে।

 

প্রাচীন পেগান সভ্যতাগুলোয় মানুষের বিশ্বাস ছিল সুগন্ধি দেবতাদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক মর্যাদাতেও সুগন্ধি গুরুত্বপূর্ণ। সুগন্ধির গুণমান ও পরিমাণ ছিল সামাজিক মর্যাদার একটি নির্দেশক। প্রাচীন দুনিয়ার বিখ্যাত সব নাম থিওফ্রাস্টাস, প্লিনি, জোনোফোন, অ্যারিস্টটল তাদের কালের সুগন্ধি নিয়ে লিখেছেন। সুগন্ধির গুরুত্ব নিয়ে তাদের কারো মধ্যেই সন্দেহ ছিল না।

 

বলা যায়- মানুষের অনুভূতি, স্মৃতিতে ঘনিষ্ঠভাবে ঘ্রাণ তথা সুগন্ধি জড়িয়ে আছে। তাই মানুষের কাছে সুগন্ধির মূল্য আছে। এ গেল মানুষের বায়োলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সুগন্ধির সম্পর্ক। এবার আরেকটি পরিপ্রেক্ষিত থেকে সুগন্ধির গুরুত্বের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।

 

ইতিহাস যেমন কালগর্ভে বিলীন হয়, তেমনটা ঘটতে পারে ঘ্রাণের ক্ষেত্রেও। ধরা যাক কাঠের শেলফে চামড়ায় বাঁধানো বই। চামড়া দিয়ে বই বাঁধাই যেমন এখন আর সহজলভ্য নয়, তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে এর অনন্য ঘ্রাণও। পুরনো লাইব্রেরি কিংবা বুকশপগুলোয় হয়তো এখনো সেই ঘ্রাণ টিকে আছে।

 

এ ঘ্রাণ কেবল সংশ্লিষ্টদের স্মৃতি-আনন্দ নয় বরং এর আছে সাংস্কৃতিক-ঐতিহ্যগত গুরুত্বও। এ রকম কয়েকশ বছরের পুরনো চামড়ায় বাঁধানো বই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত ভল্টে রাখা হয়। তাই এসব বইয়ের ঘ্রাণ নেয়াটা এখন আর সহজ নয়। সহজ কথায় সভ্যতার গতি-প্রকৃতির সঙ্গে বদলে যায় ঘ্রাণ-সুগন্ধের প্রাপ্তি, উপভোগ।

 

ফরাসি-আর্মেনিয়ান পারফিউমার ফ্রান্সিস কার্কজিয়ানের কথায় খাবার ও ওয়াইনের মতো পারফিউমও ফরাসি সংস্কৃতির অংশ, এটা তাদের জীবনের অংশ। ফরাসিরা ১২ বা ১৩ বছর বয়সেই মেয়েদের দোকানে নিয়ে যায় তাদের পছন্দের পারফিউম বেছে নেয়ার জন্য। সপ্তদশ শতকে ফ্রান্সে সুগন্ধি শিল্প দারুণ সাফল্য পায়। ইংল্যান্ডে অষ্টম হেনরি ও রানী প্রথম এলিজাবেথের শাসনামলে সুগন্ধির ব্যবহার বিস্তৃত হয়। রানী যেখানে যেতেন, সেখানে যথেষ্ট সুগন্ধি ছিটানো হতো, কারণ তিনি কোনো দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারতেন না।

 

সুগন্ধি মানুষ যতটা না নিজের জন্য ব্যবহার করে, তার চেয়ে বেশ করে অন্যকে প্রভাবিত, খুশি করতে। কথিত আছে, জুলিয়াস সিজারের হত্যাকাণ্ডের পর ক্লিওপেট্রা মার্ক অ্যান্টনিকে যে নৌকায় স্বাগত জানিয়েছিলেন তার পালে ছিল সুগন্ধি মেশানো।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর